বই: শেষের কবিতা
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশনা: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
মুদ্রণ মূল্য: একশত টাকা মাত্র
আমরা যখন নিরপেক্ষ ভাবে কারো জীবনের দিকে তাকায় তখন মনে হয়, তিনি যদি এমন না করতেন তাহলে এমন ঘটত না আর ঠিক এভাবে এমন করে কষ্ট পেতে হতো না। জীবনে অনেক কিছু ঘটে যাকে বাধা দেওয়া যায় না আর তা বাইরে থেকে উপলব্ধিও করা যায় না। এটা বুঝতে হয় জীবন দিয়ে। জীবনের এই ঘটনা গুলোকে অস্বীকার না করে তাকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যে সম্ভব শেষের কবিতা উপন্যাসের অমিত চরিত্র তার প্রমাণ।
মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রেম। প্রেম মানুষের জীবনকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। মনের কোথায় কখন যে কী ঘটে আর মানুষ পাগলের মত ছুটতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ এই উপন্যাসে কথা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘ভালোবাসা খানিকটা অত্যাচার চায়, অত্যাচার করেও।’
ভালোবাসা, বিয়ে এবং মিলন এই শব্দগুলোকে আমরা একই রকম মনে করে জীবনে সংকট তৈরি করি। কিন্তু এগুলোর মধ্যে যে বেশ পার্থক্য আছে। আর তা অভিধান দিয়ে বুঝতে গেলে মানেটা ভিন্ন হয়ে যায় এগুলো জীবন দিয়ে উপলব্ধির বিষয়। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে প্রেম ভালোবাসা বিবাহের হাজারখানা মানে থাকতে পারে। রবীন্দ্রনাথ এই উপন্যাসে লিখেছেন, ‘ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার চেয়ে আরও বেশি জ্যান্ত। অধিকাংশ বর্বর বিয়েটাকেই মনে করে মিলন, সেইজন্যে তার পর থেকে মিলনটাকে এত অবহেলা।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা শেষের কবিতা উপন্যাস যেনো তার বিস্বয়কর সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম। এই উপন্যাসের অধিকাংশ লাইন যেনো এক একটি প্রবাদ। ১৯২৮ সালে প্রবাসী পত্রিকায় লেখা এই উপন্যাসের প্রত্যেকটা চরিত্র এখনো বাস্তব। আমাদের চারপাশে কত অমিত, লাবণ্য, কেতকী ও শোভনলালের মতো মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিয়ে জীবনযাপন করছে। তবে অমিত, লাবণ্য ও শোভনলালের মতো এত পড়াশোনা জানা যুক্তিবাদী মানুষ এখন কমতে শুরু করেছে আমার ধারণা। কেতকীর মতো সবাই যেনো বিলিতি দোকানের পুতুল হয়ে যাচ্ছে। তারা নিজের স্টাইলটা কে ভুলে অন্যের স্টাইলকে গ্রহণ করে নিজেকে ফ্যাশানেবল ভাবতে যেয়ে নিজেকেই বিকিয়ে দিচ্ছে।
শেষের কবিতা উপন্যাসে প্রত্যেকটা চরিত্র আমার খুবই ভালো লেগেছে। উপন্যাসের জন্য প্রতিটি চরিত্র একদম যথাযথ । অমিত যেমন প্রথম থেকেই একটু উদ্ভট টাইপের আর লাবণ্য ঠিক শুরু থেকেই এতো সাবলীল। যেনো সব ছেলেরা জীবনে একজন লাবণ্যকে চায় আর সব মেয়েরাই হয়তো তাদের স্বাভাবিক সংকোচতাকে দূর করে একজন অমিত কে পেতে চায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উপন্যাসে লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমিত চরিত্রের মাধ্যমে সমাজকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। লাবণ্য এবং কেতকী দুজনকেই অমিত গ্রহণ করেছেন এবং তাও একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। যতিশংকর যেনো সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে প্রশ্ন করেছে, দুটোর মধ্যে একটাকেই কি বেছে নিতে হয় না?
অমিত সমাজকে কঠিন ভাবে তার জবাব দিয়েছে,
যার হয় তারই হয়, আমার হয় না।
লেখা: চন্দন পাল
কর্মকর্তা, ব্যাংক এশিয়া